Ratings1
Average rating4
We don't have a description for this book yet. You can help out the author by adding a description.
Reviews with the most likes.
তাঁর লেখা চিঠিপত্র পড়লে আমার সামনে একটা ভিন্ন রূপে আত্মপ্রকাশ করেন রবীন্দ্রনাথ। চিঠি তিনি লিখেছেন বিস্তর। নিজের গহন আন্তরিক সত্তাকে চিঠির পৃষ্ঠায় যতটা উন্মোচিত করেছেন, অন্য কোথাও এতটা করেননি মনে হয় (গান বাদ দিয়ে)। মনের মতো পত্রসঙ্গী পেলে তাঁর যেন আলাদা একটা দেখার চোখ খুলে যেত, একটা আলাদা ভাবার মন আবিষ্কৃত হতো, কলমের কালির রং পাল্টে যেত।
তাঁর লেখা চিঠিপত্রগুলো খণ্ডে খণ্ডে সংকলিত হয়েছে। প্রথম এই খণ্ডটিতে রয়েছে স্ত্রী মৃণালিনী দেবীকে লেখা চিঠির সম্ভার। জীবনে অনেক নারীর সঙ্গে বিভিন্ন মাত্রায় ঘনিষ্ঠতা হয়েছে তাঁর, কিন্তু যাকে বলে ‘জীবনসঙ্গিনী', তা একমাত্র মৃণালিনী ছাড়া আর কেউ ছিলেন না।
সাধারণ আলাপ-আলোচনা-আড্ডা-বিতর্কে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কাদম্বরী দেবী, লেডি রাণু মুখোপাধ্যায়, ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী, নির্মলকুমারী মহলানবীশ, এমনকি বিদেশিনী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর নাম উঠে আসে অহরহ। কিন্তু এই চিঠিগুলো পড়লে বোঝা যায়, স্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর মানসিক যোগাযোগ ছিল যথেষ্ট অন্তরঙ্গ। স্ত্রীর কাছেও মনের কথা, প্রাণের কথা, হাসি ঠাট্টার কথা, নিতান্ত ঘরোয়া কথা, কিংবা গভীর জীবনদর্শনের কথা আদানপ্রদান করেছেন তিনি।
“ভাই ছুটি” সম্বোধন করে মৃণালিনীকে লেখা চিঠিগুলোতে রবীন্দ্রনাথের একটি দাম্পত্য প্রেমিক-রূপ দেখতে পাই। স্ত্রীর জীবনাবসানের পরে স্বাভাবিকভাবেই যেটা আর কখনও কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না। অনেক নারীর কাছে অনেকরকম ভাষায়, অনেকরকম গভীরতায়, নিজেকে প্রকাশ করেছেন বটে, কিন্তু ইংল্যান্ড যাওয়ার পথে জাহাজ থেকে কল্পনায় জোড়াসাঁকোয় গিয়ে ঘুমন্ত স্ত্রীকে “একটু আধটু আদর” করার ইচ্ছের কথা, কিংবা “অনেক হামি” খাওয়ার কথা, আর কোনো নারীকে বলেছেন বলে জানা নেই আমার (রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে পারেন)।
ব্যক্তিগত কথাবার্তা ছাড়াও এই চিঠিগুলোতে রয়েছে প্রকৃতি ও পরিবেশের (মূলত পূর্ববঙ্গের গ্রামীণ অঞ্চলের) সেই অলৌকিক বর্ণনা, যা কিনা রবীন্দ্রনাথের চিঠিপত্রের অন্যতম ট্রেডমার্ক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
“চারিদিকের সবুজ ক্ষেতের উপরে স্নিগ্ধ তিমিরাচ্ছন্ন নবীন বর্ষা ভারী সুন্দর লাগচে। বসে বসে মেঘদূতের উপর একটা প্রবন্ধ লিখচি। এই প্রবন্ধের উপর আজকের এই নিবিড় বর্ষার দিনের বর্ষণমুখর ঘনান্ধকারটুকু যদি এঁকে রাখতে পারতুম, যদি আমার শিলাইদহের সবুজ ক্ষেতের উপরকার এই শ্যামল আবির্ভাবটিকে পাঠকদের কাছে চিরকালের জিনিস করে রাখতে পারতুম, তাহলে কেমন হত!”
.