Why I Am Not Going to Buy a Computer

Why I Am Not Going to Buy a Computer

1987 • 48 pages

Ratings7

Average rating3.7

15

ইদানিং সত্যিই মনে হয়, সেই যখন কম্পিউটার ছিলো না, সোশ্যাল মিডিয়া ছিলো না, তখন মানুষ কি একটু বেশি স্মার্ট ছিলো? সামান্য হলেও একটু বেশি ক্রিয়েটিভ ছিলো? মানে, কী খেলাম, কোথায় গেলাম, কার সঙ্গে গেলাম, কী সিনেমা দেখলাম, কী বই পড়লাম, কী গান শুনলাম, কার বাগানে লুকিয়ে হাগলাম, এগুলো যখন মানুষ ফলাও করে প্রদর্শন করতো না, তখন কি এইসব কাজ করে কম আনন্দ পাওয়া যেতো? এখন কি বেশি আনন্দ পাই আমরা? নদীর তীরে সূর্য অস্ত যাবার ৬৩৭৬৩৮৩১৪৭৫৫তম ছবিটা যদি পোস্ট না করা হতো, তাহলে সূয্যিমামা কিংবা নদীমাসী নিশ্চয়ই খুব বেশি দুঃখ পেতেন না?

কিংবা, অমুকে ওই কাজটা ভুল করেছে, তমুকে ওই কথাটা ভুল বলেছে, অমুক ব্যাটা কতো হাস্যকর, তমুক লোকটা কতো বোকা, এবং আমি কতো চালাক, আমি কতো স্মার্ট, আমি সবার চেয়ে কতো অন্যরকম, আমি কাউকে পাত্তা দিইনা, আমি একদম ডোন্ট কেয়ার ডোন্ট গিভ আ শিট টাইপের ড্যুড্, আমার সেন্স অফ হিউমার দেখে আমিই মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই— এই যে শুধু আমি আমি আমি আমি আমি আমি আমি! মানুষ যখন দিবারাত্র এইসব আমিমার্কা ঢ্যামনামি করতো না, তখনকার মানুষরা কি এখানকার মানুষদের চেয়ে নিজেদের বেশি ক্যাবলা ভাবতো?

দেশদুনিয়া থেকে শুরু করে পাড়ামহল্লার খুঁটিনাটি বিষয়, যুদ্ধ, মহামারী, বিশ্বকাপ, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, মেসি, মেসির বউয়ের মেজোপিসি, রোনাল্ডোর বাড়ির ঝাড়ুদার, বিরাট কোহলি, নুহাশ হুমায়ূন, চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা, অমুকের বিচি, তমুকের বাঁড়া, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের স-ম-স্ত বিষয়ে “বিশিষ্ট মৌলিক মতামত” যখন দিতো না মানুষ (দিলেও নিজের প্রাইভেট স্পেসে দিতো), এবং সেই বিজ্ঞ মতামতপ্রদানকারী মহাশয়/ মহাশয়ার পাছাটা, চেনা-অচেনা-আধাচেনা যে-কেউ এসে চুলকে না দিতো (মানে লাইক-কমেন্ট-লাভ রিয়্যাক্ট-হাহা রিয়্যাক্ট এইসব দেওয়ার কথা বলছি), তখন কি মানুষ তার নিজের বুকের ভিতরে ফুঁসতে থাকা “মূল্যবান মতামত”গুলো বাইরে বের করতে না পেরে ডিপ্রেশনের শিকার হয়ে বাথরুমে বসে ভেউ ভেউ করে কাঁদতো? আর তাদের সেইসব বালের মতামতের অভাবে মানবসভ্যতার গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে যেতো দিনে ছয়বার?

সোশ্যাল মিডিয়ায় এতো যে দুঃসাহসী নির্ভীক বিপ্লবীর ছড়াছড়ি, যারা একখান কিবোর্ড আর কয়েক GB সস্তা data আর হাতে কিছু ফাঁকা টাইম জোগাড় করতে পারলেই— ব্যাস, শুরু করে দ্যায় সংগ্রাম!! প্রতিবাদ!! প্রতিশোধ!! গণজাগরণের আহ্বান!! মহা-বিদ্রোহী রণক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত, যবে উত্‍পীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না!!!!! সোশ্যাল মিডিয়ার এই চে গেভারা ফিদেল কাস্ত্রো মহাত্মা গান্ধী মাদার তেরেসা মার্টিন লুথার কিং ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলরা যখন ছিলো না, আমি মাঝে মাঝে ভাবি, মানুষের তখন কি ভয়ানক দুর্দশাই না ছিলো! কীভাবে চলতো এই দুনিয়া?? কীভাবে সমস্যার সমাধান হতো?? কতো অত্যাচারিত, বঞ্চিত, পীড়িত, অবহেলিতই না ছিলো আগেকার মানুষ, আহা রে। আজকের এই মহান কিবোর্ড-যোদ্ধাদের প্রতি রইলো আমার... একটা গোটা লাভ রিয়্যাক্ট! ♥️

আমি বোধহয় সেই শেষ প্রজন্মের মানুষ, যারা ইন্টারনেটের সামান্যতম চিহ্নও যখন ছিলো না, মোবাইল ফোনের ভ্রূণকেও চোখে দ্যাখেনি আপামর জনতা (অন্তত এই তৃতীয় বিশ্বে), সোশ্যাল মিডিয়ার ঠাকুর্দারও যখন জন্ম হয়নি, সেই জমানাকেও চাক্ষুষ করেছে ; আবার আজকের এই অন্তর্জালের ফাঁসে হাসফাঁস করতে থাকা বায়বীয় দুনিয়াতেও নিঃশ্বাস নিয়েছে। সবজান্তা বিজ্ঞ পণ্ডিতদের ভিড়ে মিশে নিজেও প্রায় সেরকম হয়ে গেছে। সিনেমার নায়িকার ব্রেকআপ হলে নিজের “বিশিষ্ট মতামত”টুকু সোশ্যাল মিডিয়ার মাছের বাজারে ছেড়ে আসতে হাত চুলকায়। আমার মতের সঙ্গে যাদের মেলেনা, আমার পছন্দের সিনেমা যারা দ্যাখে না, আমার পছন্দের গান শোনেনা, বই পড়েনা, যাদের “ক্লাস” আমার থেকে নিচু, তাদের তাচ্ছিল্য করতে না পারলে ভাত হজম হয়না। আস্তিক হলে নাস্তিকদের, নাস্তিক হলে আস্তিকদের চোদ্দোগুষ্টিকে ভার্চুয়াল ডান্ডাপেটা না করলে সকালে হাগু পরিষ্কার হয়না। আর আছে স্বঘোষিত সমালোচকদের দল। সিনেমা থেকে শুরু করে বাতের ঔষধ, কবিতা থেকে শুরু করে কন্ডোমের স্থিতিস্থাপকতা— বিনিপয়সার এই ওস্তাদ সমালোচকদের হাবভাব দেখলে অঞ্জন দত্তের গান মনে পড়ে যায়।

তুমি না থাকলে দেবদাস কবে হয়ে যেত ক্ষুদিরাম
তুমি না থাকলে শুধু ডানদিক থাকত না কোনো বাম,
ধর্মতলায় লেগে যেত রোজ ধর্মের যুদ্ধ
তুমি না থাকলে বেচত বিড়ি গৌতম বুদ্ধ,
তুমি না থাকলে রবীন্দ্রনাথ
কালির দোয়াত মাথায় ঠুকে হত কুপোকাত!

সত্যি, আপনারা না থাকলে আমাদের মতো অসহায়দের কী যে মুশকিল হতো। আপনাদের জন্যেও রইলো আমার তরফ থেকে একপিস সশ্রদ্ধ লাভ রিয়্যাক্ট। ♥️

যখন মানুষের হাতে হাতে কম্পিউটার (এবং তার মেজোবোন স্মার্টফোন) ছিলো না, তখন কি মানুষ সত্যিই এখনকার মানুষদের চেয়ে বেশি স্মার্ট ছিলো? বেশি ক্রিয়েটিভ ছিলো? (বালের ওই meme তৈরির ক্রিয়েটিভিটির কথা বলছি না।) বেশি চিন্তাশীল ছিলো? ধৈর্যশীল ছিলো? বেশি সহনশীল ছিলো?

প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো জানা!