Ratings413
Average rating4.2
দা কালার পার্পল পড়তে শুরু করার আগে স্থির করেছিলাম, নারীবাদী সাহিত্য, কিংবা আফ্রিকান-আমেরিকান সাহিত্য, কিংবা সমকামী সাহিত্য— এইরকম কোনো বিশেষ লেবেলের কথা মাথায় রেখে এই উপন্যাসটা পড়বো না আমি। কালার পার্পল একটা অতি বিখ্যাত, বহুপঠিত এবং সম্মানিত উপন্যাস। পাঠক হিসেবে একে আমি “স্বাভাবিক” উপায়ে গ্রহণ করতে চেয়েছিলাম। আর পাঁচটা মহৎ সাহিত্য যেভাবে গ্রহণ করে থাকি, সেভাবে। কিন্তু পারলাম না। উপন্যাসের লেখিকা অত সহজে আমাকে রেহাই দিলেন না।
নারীবাদী দর্শন, কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনসংগ্রাম এবং যৌনতা সম্পর্কিত যতরকম variation আছে, মাত্র ২৫০ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসে লেখিকা প্রায় সবকিছু নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। কিচ্ছু বাদ দেননি। শুধু আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গদের জীবন নিয়ে আলোচনা করেই থেমে যাননি, আফ্রিকায় চলে গেছেন! সেখানকার আদিবাসী কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের জীবন, তাদের দুঃখ-দুর্দশা নিয়েও বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। নারীবাদের সঙ্গে ঈশ্বরচেতনার সংযোগ ঘটিয়েছেন। সমকামিতা, বাই-সেক্সুয়ালিটি, ইনসেস্ট, সবকিছু নিয়ে টানাটানি করেছেন। আরো কতো কিছু যে করেছেন!
গোটা উপন্যাসটা অনেকগুলো চিঠির সমাহারে নির্মাণ করা হয়েছে (“epistolary novel”)। বেশিরভাগ চিঠি যিনি লিখেছেন, তিনি আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের জর্জিয়া রাজ্যের একজন গ্রাম্য স্বল্পশিক্ষিত কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ে। সেই মেয়েটির মুখের আঞ্চলিক ভাষাতেই চিঠিগুলো লেখা হয়েছে। She happy. Don't nobody come see us. Us mama dead. Soon I gitting marry to him. —এইরকম ভাষায়। Authenticity বজায় রাখার জন্যেই নিশ্চয়ই এই রচনাশৈলী গ্রহণ করেছেন লেখিকা? কিন্তু আমার মনে হয়েছে, এটা শুধুই চমক সৃষ্টি করার একটা উপায়। ঠিক যেমন চমক সৃষ্টি করার জন্যে আরো বত্রিশ রকম কায়দা করেছেন তিনি। এমনকি, ডুবে যাওয়া জাহাজের মানুষদের কোনোরকম explanation ছাড়াই বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছেন! (মিথ্যা বলছি না!)
এই আরোপিত, কৃত্রিম, চমকসর্বস্ব একটা উপন্যাসকে পুলিৎজার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। স্পিলবার্গ সিনেমা বানিয়েছেন (এটা অবশ্য খুব অবাক হওয়ার মতো ঘটনা নয়)। ব্রডওয়েতে মিউজিক্যাল অভিনীত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ষাট লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে বইটা। কিন্তু এইরকম অতিনাটকীয়, অস্বাভাবিক, (কিছু ক্ষেত্রে আপত্তিকর) উপায়ে মানুষের জীবনের সমস্যার সমাধান করা হয় বুঝি? মেয়েদের প্রতি সমাজের চিরাচরিত বঞ্চনাকে নিয়ে, সমকাম নিয়ে, বর্ণবাদ নিয়ে, এই ঠাট্টা না করলে হতো না? কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের জীবনের, কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েদের জীবনের, পৃথিবীর যেকোনো মেয়ের জীবনের, সত্যিকারের এবং ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোকে নিয়ে এরকম ফাজলামি না করলে হতো না?
ভুয়া উপন্যাসের ভুয়া আশাবাদ!
.