আনোখা নদী

আনোখা নদী

2018 • 16 pages

Ratings1

Average rating4

15

চোখের জলের মতো কয়েকফোঁটা আকারের এই কবিতার বইটি চোখের জলের মতোই সরল রহস্যময়। এই কবির কাব্যমননের কেন্দ্রবিন্দুতে, অন্তত এই বইটির ক্ষেত্রে, সেই নারীটি নেই, সাধারণত যেই নারীটি থাকে পৃথিবীর আপামর কবিদের কুঠারের ধারালো কিনারে, কিংবা পালকের নরম ডগায়। অর্থাৎ কবিদের প্রেমিকারা। অথচ এই কবিতাগুলোকে ভালোবাসার কবিতা ছাড়া আর কী-বা বলা যায়? ষোলো পৃষ্ঠার পরিসরে এই বইতে ছড়িয়ে আছে মাত্র তেরোখানি নম্র কবিতা। প্রতিটি কবিতার অনুষঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কবির আম্মার প্রসঙ্গ। অন্ধকারের অন্তর্গত শিমুল যখন টুপটাপ ঝরতে থাকে সারারাত, রোগনিরাময়কারী হাওয়ায় কবির সেই আম্মা, দাঁড়িয়ে থাকেন নিজের ভেতরে, একা—

আমার বাড়ি নবদ্বীপ থেকে চাপড়া নামের জায়গাটিতে যেতে মোটরবাইকে সময় লাগে খুব বেশি হলে এক ঘন্টা। কয়েকদিন আগে পাঠকবন্ধুদের কাছে তাদের বাৎসরিক প্রিয় বইয়ের নাম জানাতে অনুরোধ করেছিলাম। গুডরিডসের অনেক পুরোনো বন্ধু (সম্ভবত সবচেয়ে পুরোনো বন্ধু) রিফাত, প্রায় কুন্ঠিত হয়ে দুটো বইয়ের নাম জানায় আমাকে। তার মধ্যে এই বিশীর্ণকায় কবিতার বইটি অন্যতম। হারুনের কাছে বইটির খোঁজ নিলে স্বয়ং কবির থেকে বইটির পিডিএফ চেয়ে আনে হারুন (বন্ধুভাগ্য!)। বইটি খুলে দেখি, বাংলাদেশের বগুড়া জেলার কবির এই বইটি প্রকাশিত হয়েছে ভারতের নদীয়া জেলার সেই চাপড়া থেকে! ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া...!

কবি হাসান রোবায়েতের সবচেয়ে বড় শক্তি লুকিয়ে আছে অনুপম দৃশ্য ও চিত্রকল্পময় পরিবেশমাধুর্য সৃষ্টির পারদর্শিতায়। শব্দের উপমাময়, গভীর ইঙ্গিতবাহী, রহস্যময়, ছলনাময় ব্যবহারে, শীতনিশীথে গায়ে জড়িয়ে রাখা পুরাতন চাদরের মতো পাঠকের অনুভবে জড়িয়ে থাকে, জামের নিধু বনে যেসব হাঁসেদের লাল পায়ে পায়ে বাজছে সন্তুর, সেইসব হাঁসেদের বুকের উষ্ণতা। “আনোখা” শব্দটির বাংলা অর্থ হতে পারে - “অনন্য”, কিন্তু ইংরেজি প্রতিশব্দটা বললে অর্থটা আরো পরিষ্কার হবে - “unique”. আমাদের প্রত্যেকের জীবনে এই অনন্য, unique নদী আর কে হতে পারে, আমাদের মা ছাড়া? মোরগ জবাই করা সন্ধ্যায় যখন কবির আম্মা গিঁট মেরে বেঁধে রাখতেন মৌসুমী হাওয়ার দিন... কিংবা, নিমগাছের অমলিন ব্যথায় কবির আম্মা লেপে দিতেন হাতের অন্ধকার... আমিও একটু আগে, কবিতাগুলো পড়ার ফাঁকে দেখে এলাম, আমার আম্মা, আমার মা, নিবিষ্ট মনে বুনছে আমার জন্যে মেরুন রঙের সোয়েটার। আমার চোখে অনর্থক জল এলো। জানিনা ক্যানো মনে পড়ে গ্যালো এই বইয়ের কয়েকটা লাইন—

সিনেমার দিনশেষে সন্ধ্যাতারার নিচেআম্মা চাল ঝাড়তে বসলেগমগমে নিস্তব্ধতার ভেতর একটা বাঁশপাতাক্রমশ পেরিয়ে যায় চিত্রার্পিত হাওয়া......একটা সাইকেলের বেল চিরকাল বেজে যাচ্ছেপত্রছিন্ন সন্ধ্যায়—










December 27, 2022